শুক্রবার GBP/USD পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত ছিল। শুক্রবারের দরপতন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বাজার এবং বেকারত্ব প্রতিবেদনের শক্তিশালীফলাফলের প্রভাব বলে মনে হলেও, এর আগের দরপতনগুলো যুক্তরাজ্যের "বন্ড সংকট" এর জন্য দায়ী করা হয়েছিল। তবে, পাউন্ড স্টার্লিংয়ের মূল্য টানা তিন মাস ধরে নিম্নমুখী রয়েছে, যা আমরা 2024 সালের প্রথম দিকেই পূর্বাভাস দিয়েছিলাম। এই কারণগুলো মূলত স্থানীয় প্রভাবক—যেমন মার্কিন প্রতিবেদনের শক্তিশালী ফলাফল বা যুক্তরাজ্যের নির্দিষ্ট সংকট। বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়ে গেছে: পাউন্ড এখনও অতিমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে, এবং এর দাম এখনও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের আর্থিক নীতিমালা নমনীয় করার প্রত্যাশা পুরোপুরি প্রতিফলিত করে না, যেখানে ফেডারেল রিজার্ভের নীতিমালা নমনীয় করার সম্ভাবনা ইতোমধ্যেই স্পষ্ট।
শুক্রবার প্রকাশিত মার্কিন ননফার্ম পেরোল এবং মার্কিন বেকারত্ব সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ইতিবাচক ফলাফল অবশ্যই এই পেয়ারের দরপতন ত্বরান্বিত করেছে। তবে, এমনকি সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন ছাড়াই বৈশ্বিক প্রভাবগুলো পাউন্ডের মূল্যকে নিম্নমুখী করছে। সাপ্তাহিক টাইমফ্রেমে এক নজর দেখলেই বোঝা যায় যে পাউন্ডের আরও দরপতনের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এখনও আশা করছি এই পেয়ারের মূল্য 1.1800 লেভেলে পৌঁছাবে। দীর্ঘমেয়াদে, এই দরপতন আরও ব্যাপক হতে পারে, কারণ 16 বছরের দীর্ঘ নিম্নমুখী প্রবণতা এখনও কার্যকর রয়েছে।
সামনের সপ্তাহে পাউন্ডের চ্যালেঞ্জ
ইউরোর মতো পাউন্ডও আসন্ন সপ্তাহে মৌলিক পটভূমি থেকে সমর্থন পেতে সমস্যায় পড়বে। বুধবার যুক্তরাজ্যে ডিসেম্বর মাসের মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে, যা বৃদ্ধি পেয়ে 2.7%-এ পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও, নভেম্বরের জিডিপি, শিল্প উৎপাদন, এবং খুচরা বিক্রয় সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। যদিও এই প্রতিবেদনগুলোর ফলাফল স্বল্পমেয়াদে GBP/USD পেয়ারের উপর কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে, তবে এগুলো চলমান তিন মাসের নিম্নমুখী প্রবণতা পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে না, সেইসাথে ১৬ বছর ধরে এই পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা বিরাজ তো করছেই।
মার্কিন ডলারের মূল্যের উপর প্রভাব
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইভেন্টগুলো ডলারের মূল্যের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারবে কি না, তা নির্ধারণ করা কঠিন। পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে মার্কিন অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে রয়েছে উৎপাদক মূল্য সূচক (PPI), ডিসেম্বর মাসের মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন, খুচরা বিক্রয়, বেকারত্ব সুবিধার আবেদন, নতুন আবাসন বিক্রয়, নির্মাণ অনুমোদন, এবং শিল্প উৎপাদন সংক্রান্ত প্রতিবেদন। এর মধ্যে, মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন ছাড়া বাকি প্রতিবেদনগুলো শুধুমাত্র স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদনের প্রভাব কেমন হবে?
ডিসেম্বর মাসের মার্কিন ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) 2.8% থেকে 2.9% এর মধ্যে বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এই বৃদ্ধি ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর বিষয়ে সতর্ক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে। যদি মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাহলে ডলারের শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে, ফেড 2025 সালে দুইবার সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছে, যেখানে ট্রেডাররা 0.25% করে দুইবার সুদের হ্রাসের প্রত্যাশা করছে। তবে, যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী সুদের হার কমানো না হয়?
ট্রাম্পের নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অনিশ্চয়তা
মাত্র আট দিনের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তার সম্ভাব্য পুনরায় শুল্ক প্রবর্তন এবং বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে এমন নীতিমালা অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। যদি মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে, তাহলে ফেড আগামী ১২ মাসে সুদের হার কমানো থেকে বিরত থাকতে পারে। ট্রেডাররা ইতোমধ্যে 2024 সালে ফেডের ৬ বা ৭ বার সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা করেছিল এবং 2025 সালে আরও ৪ বার সুদের হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে।
গত পাঁচ দিনের ট্রেডিংয়ে GBP/USD পেয়ারের মূল্যের গড় ভোলাটিলিটি হচ্ছে 134 পিপস, যা এই কারেন্সি পেয়ারের জন্য বেশ উচ্চ বলে বিবেচিত। সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, আমরা আশা করছি যে এই পেয়ার 1.2071 এবং 1.2339 লেভেলের মধ্যে ট্রেড করবে। হায়ার লিনিয়ার রিগ্রেশন চ্যানেল নিম্নমুখী প্রবণতা নির্দেশ করছে, যা এই পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। CCI ইন্ডিকেটর আবারও ওভারসোল্ড জোনে প্রবেশ করেছে; তবে, নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্যে ওভারসোল্ড সিগন্যাল সাধারণত শুধুমাত্র একটি কারেকশনের সম্ভাবনা নির্দেশ করে। এই সূচকের বুলিশ ডাইভারজেন্স পূর্বে একটি কারেকশনের ইঙ্গিত দিয়েছিল, যা এখন সম্পন্ন হয়েছে।
নিকটতম সাপোর্ট লেভেল:
S1: 1.2207
S2: 1.2085
S3: 1.1963
নিকটতম রেজিস্ট্যান্স লেভেল:
R1: 1.2329
R2: 1.2451
R3: 1.2573
ট্রেডিংয়ের পরামর্শ:
GBP/USD পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। এই মুহূর্তে লং পজিশন ওপেন করা পরামর্শযোগ্য নয়, কারণ আমরা মনে করি পাউন্ডের দর বৃদ্ধি সমর্থন করতে পারে এমন সকল কারণ ইতোমধ্যেই একাধিকবার বিবেচিত হয়েছে, এবং বর্তমানে এই পেয়ারের মূল্যের বুলিশ প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন প্রভাবক নেই।
যেসব ট্রেডার "শুধুমাত্র টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস" ব্যবহার করেন, তারা মূল্য মুভিং এভারেজের উপরে ওঠার পর লং পজিশন বিবেচনা করতে পারেন, যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে 1.2451 এবং 1.2573 লেভেল। তবে, সেল অর্ডার এখনও অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক, যার লক্ষ্যমাত্রা 1.2207 এবং 1.2085 লেভেলে নির্ধারিত হয়েছে।
চিত্রের ব্যাখা:
- লিনিয়ার রিগ্রেশন চ্যানেল - বর্তমান প্রবণতা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। যদি উভয়ই একই দিকে পরিচালিত হয়, তাহলে এর অর্থ হল বর্তমানে প্রবণতা শক্তিশালী।
- মুভিং এভারেজ লাইন (সেটিংস 20.0, স্মুথেদ) – স্বল্পমেয়াদী প্রবণতা এবং বর্তমানে কোন দিকে ট্রেডিং করা উচিত তা নির্ধারণ করে।
- মারে লেভেল - মুভমেন্ট এবং কারেকশনের লক্ষ্য মাত্রা।
- অস্থিরতার মাত্রা (লাল লাইন) - সম্ভাব্য প্রাইস চ্যানেল যেখানে এই পেয়ারের মূল্য পরের দিন অবস্থান করবে, যা বর্তমান অস্থিরতা সূচকের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়।
- সিসিআই সূচক – এই সূচকের ওভারসোল্ড জোনে (-250-এর নীচে) বা ওভারবট জোনে (+250-এর উপরে) প্রবেশের মানে হল যে চলমান প্রবণতা বিপরীতমুখী হতে যাচ্ছে।